শান্তিগঞ্জে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভাব: কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী হবে?
শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দিন দিন ঝরে পড়ছে। শিক্ষার এই অভাব শুধু তাদের ভবিষ্যৎকেই অন্ধকারাচ্ছন্ন করছে না, বরং পুরো এলাকাটির উন্নয়নকেও পিছিয়ে দিচ্ছে।
শিক্ষা সংকটের বর্তমান চিত্র
শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাতটি গ্রাম—সুলতানপুর, তেঘরিয়া, সদরপুর, পার্বতীপুর, তালুকগাঁও, কামরুপদলং এবং আস্তমার শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। ৫ম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না, আবার যারা ৮ম শ্রেণি পাস করে উচ্চতর শ্রেণিতে যেতে চায়, তারাও এই সমস্যার মুখোমুখি।
উপজেলা সদরের কাছাকাছি কিছু বিদ্যালয় থাকলেও আসন সংকট এবং দূরত্বের কারণে অনেকেই সেসব স্কুলে ভর্তি হতে পারে না। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে।
শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার কারণ
১. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভাব:
উপজেলার মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার্থীদের দূরের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এটি অনেকের জন্য আর্থিক ও শারীরিকভাবে অসুবিধাজনক।
২. পর্যাপ্ত আসনের অভাব:
ডুংরিয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, জয়কলস উজানীগাঁও রশিদিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাগলা মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো বিদ্যালয়গুলোর আসন সংখ্যা খুবই সীমিত।
- পরিবহন সংকট:
গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে কোনো পরিবহন সুবিধা পায় না। এতে করে মেয়েদের জন্য ঝুঁকি এবং ছেলেদের জন্য ক্লান্তি তৈরি হয়।
সম্ভাব্য সমাধান
এ সমস্যার সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন:
নতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন:
উপজেলা সদরে একটি বালক ও একটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা আবশ্যক।অবকাঠামোগত উন্নয়ন:
পাশের বিদ্যালয়গুলোর আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন ভবন নির্মাণ করা।পরিবহন ব্যবস্থা চালু:
শিক্ষার্থীদের জন্য কম খরচে বাস বা ভ্যান চালুর ব্যবস্থা করা।ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ:
অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়া।
ভবিষ্যতের আশঙ্কা ও আশা
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় অনেক শিশুই শিশুশ্রম ও অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। এতে তাদের মেধা যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সমাজেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তবে আশার কথা, প্রশাসন এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, এই সংকট সমাধানে তাঁরা কাজ করছেন।
শেষ কথা
শান্তিগঞ্জের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুদের মেধা নষ্ট হওয়ার আগেই প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ একটি বিদ্যালয় শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি সমাজের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
লেখক: একজন সচেতন নাগরিক, সুনামগঞ্জ